নূরজাহান। মা হাতির নাম। তার দু’টি বাচ্চা রয়েছে। একটির বয়স চার বছর। অন্যটির বয়স পাঁচ বছর। বাচ্চা দুটিকে খুবই ভালোবাসেন মা নূরজাহান। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যবসার কাজে নামাতে চান হাতির মালিক। মা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে না চাইলেও জোর করে চার পায়ে মোটা রশি দিয়ে বেধে রাখে মালিক। হাতির এই দুই বাচ্চাকে পোষ মানাতে হাদানি প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয় একদল প্রশিক্ষকের হাতে। শুরু করে তাদের অমানবিক বর্বরতার প্রশিক্ষণ।

পোষ মানাতে প্রশিক্ষণের নামে নানা কায়দায় দুই-তিন মাসব্যাপী চলে এই ছোট বাচ্চাদের ওপর অসহনীয় নির্যাতন। মোটা দড়ি দিয়ে খুঁটির সাথে বেধে চলে দীর্ঘ সময়ব্যাপী মারপিট। সহ্য করতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হাতি শাবক। কিছু খাইয়ে কিছুটা সুস্থ করে আবারও চালানো হয় লোহার কুকু দিয়ে তাদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার। কী বর্বরতা। হাতির বাচ্চার সাথে। তাও আবার পোষের নামে ঠুনকো অজুহাতে। নির্যাতনের এই স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে মৌলভীবাজারে জুড়ি উপজেলায় গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে পাহাড়ের গহীনে।

পোষ মানানোর প্রশিক্ষকদের বক্তব্যে জানা যায়, হাতিদের পোষ মানোর কাজ করতে হয় ছোটকাল থেকেই। হাতির বাচ্চাদের পোষ মানাতে নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বাচ্চাাদের পায়ে রশি বেধে কখনো পেটানো হয়, শুয়িয়ে রাখা হয়, পানিতে নামানো হয়, মাঝে মাঝে লোহার তৈরি কুকু’র ব্যবহার করে তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পোষ মানানোর প্রশিক্ষণের নামে চালানো হয় এই বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা। প্রশিক্ষকরা জানান, যতোদিন পর্যন্ত বাচ্চারা কথা না মানবে, পোষে না আসবে ততোদিন পর্যন্ত তাদের সাথে এই ব্যবহার চলবে।

উল্লেখ্য, সামর্থ্য অনুযায়ী, হাতির মূল্য ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা হয়ে থাকে। এমনকি হাতির দাঁতও লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি হয়। এই হাতির বাচ্চাকে জন্মের পোষ মানাতে হয় আড়াই বছর থেকে। বাংলাদেশে ব্যাপকহারে কমছে বন্য হাতির সংখ্যা।

এদিকে জুড়ীতে ব্যবসায় ‍নামাতে পোষ মানাতে হাতি শাবককে মান্ধাতার আমলের নিষ্ঠুর নির্যাতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ইতোমধ্যে জুড়ী থানার ওসি ও বন্যাপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে ১৫ মার্চের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে নির্দেশ দেন বিচারক। গত ২৮ জানুয়ারি হাতি বাচ্চাকে (টাইগার) নিষ্ঠুর নির্যাতনের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর আদালত এ নির্দেশ দিয়েছেন।

 

কলমকথা/ বি সুলতানা